1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৩ অপরাহ্ন

ডা. মোজাহিদুল হকের ধারাবাহিক গল্প ২৫

ডা. মোজাহিদুল হক
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

জীবনের গল্প

পর্ব- ২৫

ঘর জুড়ে অদ্ভুত এক নৈঃশব্দ্য। ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবনা নিয়ে বিছানা ছাড়লাম। কখন থেকে বেজেই যাচ্ছে মোবাইল টা। আবার বন্ধ হয়ে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শহরটকে দেখছি। আহা এক অতি মনোরম লাগছে শহর টাকে। ধুলোবালি নেই, ভিড়ভাট্টা নেই, আকাশ ঝকঝকে নীল, বাতাসে কিলো কিলো অক্সিজেন। ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে ঢুকলাম বাথরুমে। ভাল করে ধুলাম হাত, মুখ, ঘাড়। বেরিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে। নিরীক্ষণ করছি নিজেকে বিয়াল্লিশের সতেজ ত্বক, সপ্রান। কিন্তু চোখের নীচে যেন কালির আভাস? পরিশ্রমের চাপ পড়ছে নাকি?  হতে পারে। সকালে মুখ ভার ছিল আকাশের, ঘন্টা খানেক বৃষ্টি পড়েছিল ঝিরিঝিরি। আজ থেকে অহনার অফিস বন্ধ। লম্বা ছুটি পেল এবার। কি সব কাটাকুটি করছে কিচেনে।

বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম একা একা। ইদানিং একা হলেই পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করে। কেমন ছিল জীবনের রাস্তাটা?  চলতে চলতে, পথেপ্রান্তরে, কোথায় কী ফেলে এলাম?  কী ই বা কুড়িয়ে পেলাম?  অজস্র ভাঙ্গা চোরা ছবি। অগুনতি ছেঁড়া খোঁড়া দৃশ্য। এইতো জীবন, আজীবন টেনশন টেনশন….। সারাক্ষণ সরু সূতোর ওপর ব্যালেন্স করে হাঁটা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে মৃত্যু চিন্তা। এই মৃত্যুচিন্তাটা নতুন। ইদানীং হানা দিচ্ছে মাঝে মাঝে। আমল দিতে চাইনা, তবু কোন ফাঁক ফোকর দিয়ে যে ঢুকে পড়ে মগজে!  কী চমৎকার চলছিল সব কিছু। হঠাৎই সব ওলট-পালট। কপাল, সবই কপাল। সারাদিন ঘরে বসে বসে মনে হয়, মাঝদরিয়ায় একটা ফুটো নৌকোয় বসে আছি, পালানোর কোন রাস্তা নেই। রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। কদ্দিন আর শূন্য রিক্ত হস্তে এক জায়গায় আটকে থাকব?  একটা দম দেয়া ঘড়ির মধ্যে জীবনটা আটকে গেল।

শহরের ত্বকে শেষ বিকেলের নরম আলো। এ আলোয় যত না আবেশ, বুঝি বা ততটাই বিষাদ। এই পরিস্থিতি না এলে বুঝতেই পারতাম না এই পৃথিবীর বাইরেও যে এক পৃথিবী আছে, এখানে সবাই স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের বাইরে কারো কোন চিন্তা নেই। এই দুনিয়ায় কোনটা যে কার প্রকৃত চেহারা, টের পাওয়া কি অতই সহজ?  মানুষ খুব অসহায় বোধ করলেই না কোনও একটা আশ্রয় খোঁজে!

দেহের ধকল, শরীরপাত, এগুলো তাও দেখা যায়, মনের ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া কে দেখে?  হঠাৎই একটা সুন্দর বাতাস ঢুকে পড়ছে বারান্দায়। হাত বোলাচ্ছে আমার গায়ে, মাথায়।

কপালের ঘাম মুছতে মুছতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো অহনা। হাত চোখ মুখ নেড়ে উল্লাসে জানাচ্ছে কি কি রাঁধলো। অজানা এক অনুভূতি জাগছে আমার হৃদয়ে। কী এমন মহামূল্যবান জিনিস তাকে দিতে পেরেছি যে তাতেই অহনা সারাক্ষণ এতো খুশী?  ছোট ছোট তুচ্ছ জিনিসে এমন আনন্দিত হতে পারে মানুষ?  অথচ এই দুনিয়ায় আরো কত মানুষ ছিল, যাদের শুধু চাই চাই…… চাহিদার কোন সীমা পরিসীমা ছিল না। কী আশ্চর্য, তুপ্তি ও ছিলনা যেন। স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ, স্বপ্ন পূরণ ততটাই কঠিন। মাঝে মাঝে নিয়তি দেবীর নিষ্ঠুর খেলাটা কেই বা আগে ভাগে অনুমান করতে পারে!  ওইতো মাস দুয়েক আগেও অহনা সন্ধ্যার পর আমাকে নিয়ে কত উৎফুল্ল হয়েই না ফার্নিচারের শোরুম গিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখেছে সব সোফা। শোরুম ঘুরে এসে বসে বসে প্ল্যান করতো, নতুন সোফা কিনে ঘরের কোন জায়গাটায় রাখবে। আমার বুকে হাত রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অহনার মুখখানা কেমন বদলে গেল। অস্ফুটে বললো, তোমার কি মন খারাপ? কেমন একটা ঘোর লাগা গলায় বলল, এ অবস্থার জন্য তো কারো হাত নেই , দেখবে আবার সব স্বাভাবিক হবে । আমি অহনার চোখে তাকিয়ে একফালি আকাশ দেখতে পাচ্ছি। ওই একফালি আকাশের মালিক শুধু অহনা। এ সেই আকাশ, অহনার মতো মেয়ে মানুষরাই যার সন্ধান পায়। আর কেউ নয়।

বুকের চাপ ভাবটা ফিরে এলো হঠাৎ। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, যেন কেউ চেপে ধরছে নাক। মুখ দিয়ে বাতাস টানার চেষ্টা করলাম। লাভ হচ্ছে না, দমবন্ধ ভাব বেড়েই চলেছে। বাইরে নিকষ আঁধার ছাড়া কিছুই এখন দৃশ্যমান নয়। ঝাপসা ঝাপসা। উঠে বাথরুমে গেলাম। বেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বাইরের প্যাসেজটায়।  আরাম লাগছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। এখানে বেশ টাটকা বাতাস, কোন কৃত্রিম শীতলতা নেই। শ্বাস নিলাম জোরে জোরে। ফুসফুসে খানিকটা অক্সিজেন গেল। রাত গাঢ় হচ্ছে। শহরের কোলাহল এখন অনেক ঝিমিয়ে এসেছে। হঠাৎ হঠাৎ রাস্তা মাড়িয়ে উদ্দাম ছুটে যাচ্ছে কোনও রিকশা, মোটরসাইকেল। তার হর্ণের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ পলকের জন্য ছিড়ে দিচ্ছে স্তব্দতাকে। রাতচরা পাখির মতো। একটা লরী পার হলো শব্দ তুলে। ক্রমশ বিলীয়মান তার আওয়াজ দীর্ঘক্ষন রেশ রেখে দিল ঘরের বাতাসে।

পাশে অহনা অঘোরে ঘুমাচ্ছে। গুটিসুটি মেরে। কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন মুহুর্তগুলোকে দীর্ঘায়িত করে দিচ্ছে। শব্দহীন নিজ অস্তিত্ব বড় শুন্য লাগছে নিজের কাছে। পেছনের ব্যলকনির ওপাশে সারি সারি  মেহগনি আর নারকেল গাছ। প্লটটা ফাঁকা। সামনে কিছুটা কাঁচা মাটির উঠোন। আশে পাশের বাড়ীর জঞ্জালে ভর্তি সে উঠোন টা। সেখানে একটা হিংস্র মশার বাহিনী হই হই করছে। হয়তো খুঁজছে কোন রক্ত মাংশের শরীর হুল ফোটাবে বলে। কে কোন দিকে যাবে সে নিয়ে সভা হচ্ছে বোধহয়। ইতিমধ্যে কয়েকটা আমাকে গান শুনিয়ে হাতে, গালে পিন ফোটালো।

ঘরে ফিরে এলাম। কেমন কুঁকড়ে শুয়ে আছে অহনা।ছোট বাচ্চা মেয়ের মতো। আমি সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে আছি অহনার দিকে। ওকে যত দেখি ততই বিমুঢ় হচ্ছি। বিমুগ্ধ ও। আমি আমার কল্প জগতে ডানা মেলে উড়ছি। এ জগৎ একান্তই আমার একার। আমার এ মনোভূমিতে বিশ্বসংসারের কারো প্রবেশাধিকার নেই।অহনারও নেই। যৌবনের শুরু থেকেই এমন একজন জীবন সঙ্গীর খোঁজে ছিলাম। অহনার মতো। এতকাল অজানা গোপন শুঁড়িপথ ধরে এগিয়েছি। কিন্তু কিছুটা গিয়েই পথের মুখ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। হোঁচট খেয়ে রন্ধ্র পথে ফিরে এসেছি। অথচ আমি জানতাম ঠিক পথটা আছে। আছেই। খুব কাছে। খুব সহজে সেখানে পৌঁছনো যায়। কোথায় আছে পথটা??  অহনা কি সে পথের সন্ধান দিতে এল??  এত কাল পর?

আমি হাত বাড়িয়ে অহনাকে ছুঁলাম। মেরুন টপস আর সাদা রঙ্গের সালোয়ার। বালিশ ময় অহনার চুল ছড়িয়ে। ফ্যানের বাতাসে উড়ছে তার কটা।

অহনার মুখ অসম্ভব শান্ত। কপালে একটি ভাঁজও নেই। হঠাৎ চোখ মেলে কাঁপা কাঁপা স্বরে ডাকল — কাব্য!  মুহুর্তের জন্য শরীর শিরশির করে উঠলো আমার। মুহুর্তের জন্যই। এমন গাঢ় স্বরে খুব কমই ডাকে অহনা। পরক্ষণেই হাত দিয়ে বুক জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো অহনা।প্রেম কী না পারে?  মুককে সে বাচাল করে। পঙ্গু তার গুতোয় অবলীলায় ডিঙিয়ে যায় পাহাড়। অথচ আজকাল এতো প্রেমের মাঝেও একটা হালকা বিষন্নতা আমাকে জড়িয়ে আছে দিনভর। হেমন্তের বিকেলের কুয়াশার মতো। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। কিছু ভালো লাগে না আমার। ভালো না লাগার এক জটিল আবর্তে আমি যেন ঢুকে পড়েছি, বেরোনোর পথ পাচ্ছি না। টুকরো টুকরো কথা মনে পড়ে। সুখের।দুঃখের। তিক্ততার। আনন্দের। বিয়াল্লিশ বছর ধরে কত কত ঝাঁপিতে যে ভরে আছে স্মৃতি গুলো?  কত রকমের স্মৃতি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews