1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

অনন্ত খোয়াবের নদী বাঙালি

জামিল জাহাঙ্গীর
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২
বাঙালি নদী
বেলাল, মানস, মধুখালি, ইছামতি, ভলকা এই পাঁচ সন্তানের জননী এক নদী আছে বঙ্গদেশে। এই পলিময় বালুজ বদ্বীপে নদীরা সন্তান জন্ম দেয় কোন ক্লিনিক বা পরিচর্যা ছাড়াই। সন্তানেরা সকলেই যে বেঁচে থাকে এমনও নয়, কেউ বাঁচে, কেউ মরে আবার কেউ কেউ মিলিয়ে যায় কালের প্রবাহে। বীরপ্রসূ বাংলার এই ৫ সন্তানের জননী নদীর নাম বাঙ্গালী। একটি জাতির নামে একটি নদী বিষয়টি আশ্চর্যের হলেও ঐতিহাসিক সত্য।
বরেন্দ্র ভুমির ঈষৎ লালচে মাটির বুক ভিজিয়ে টিকটিক ঘড়ির কাঁটার মতো এগিয়ে চলা জলজ অস্তিতের নাম বাঙালি। রাড় বঙ্গের অপার সাংস্কৃতিক প্রবাহ, মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক লোক বিবর্তন, কাতলাহার বিল, যমুনা সুন্দরী আর ফকির বিদ্রোহের দুই কেন্দ্র বগুড়া ও রংপুরের সীমানা মানেই এই নদীর বয়ে চলা পথ। তাই এর নাম বাঙ্গালী হওয়া ভিন্ন গতি নেই। উত্তরাঞ্চলের নদীরা এখন নামেই টিকে থাকে ৯ মাস। কেবল বর্ষা মৌসুমে তাঁদের শরীরে কিছুটা রক্ত যোগ হয়। এদিক দিয়ে দক্ষিণ দিকের নদীরা সামুদ্রিক প্রবাহ পেয়ে সারাবছর নদীই থাকে। উত্তরের নদীরা নিরীহ। কিন্তু ক্ষেপে গেলে তছনছ করে দেয় একূল ওকূল।
বাঙালির উৎপত্তি নীলফামারী জেলার তিস্তা থেকে। উৎস থেকে নদীটি ঘাঘট নামে গাইবান্ধায় প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধায় এসে এটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়- একটি শাখা পশ্চিমে ঘাঘট নামে প্রবাহিত হয়ে শেরপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে পড়ে; অপর শাখা বাঙালি নামে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়ে বগুড়ায় আবারো দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এই শাখা দুটি যথাক্রমে যমুনা ও করতোয়ায় গিয়ে পড়ে।
তিস্তা নদীর প্রবাহ দুর্বল হওয়ায় বাঙালি নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। নদী গবেষক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই নদীর উপর গভীর পর্যবেক্ষণ কার্যকর রাখছেন। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি দুটি নদী একসাথে মিশে যায় তবে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ১০০,০০০ হেক্টর এলাকা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাবে। পানি বগুড়া-নগরবাড়ি সড়ক ধ্বংস করে দেবে এবং ফলশ্রুতিতে যমুনা নদীর উপর অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সেতু অকেজো হয়ে যাবে। এটি বাঙালি নদী সংলগ্ন সমভূমির বার্ষিক বন্যার হার বাড়িয়ে দেবে।
গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে ১৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর গড়ে ১৪৩ মিটার প্রস্থ নিয়ে এই নদী প্রবাহিত হচ্ছে। গভীরতা কোন কোন পয়েন্টে ১৫-২০ মিটার আবার কোন কোন পয়েন্টে ৫-৭ মিটার। একেবেকে চলার জন্য আকাশ থেকে ধারন করা ছবিতে এই নদীকে সাপের মতো দেখায়। স্থানীয়দের কেউ কেউ এই নদীকে পাথরাজ নামে ডাকে।
যমুনা ও তিস্তার পাশাপাশি বাঙালি নদী উত্তরবঙ্গের জীবন ও জীবিকায় নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। দুই পাড়ের আপাত সরল জনজীবনে এই নদীর প্রতিবিম্ব বয়ে চলে। রঙ্গ প্রিয় রংপুর আর বাঁক প্রিয় বগুড়ার মিলনরেখা হিসেবে এই নদীর প্রভাব অসীম ও অনন্তর।বাঙ্গালী নদিকে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি আবর্তিত হত। এখন বাঙ্গালীর সেই যৌবন নেই। বাইচ থেমে গেছে, মেলায় আগের মতো বাঁশি বাজে না। বিশাল আকৃতির বাঘাইর মাছ উঠলেও দাম শুনে পালিয়ে যাবার দশা সাধারণ মানুষের। বাংলাদেশের অর্থনীতির মতো বাঙালি পাড়ের সংস্কৃতি সাধারণের নাগাল থেকে সরে গেছে বিত্তশালীদের পকেটে।
বাঙ্গালী নদীর পাড় এবং বুক কোনটাই এখন আর অক্ষত নেই। যা কিছু দেখি তাঁর সবই খোয়াব। এ যেন অমর কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামার পটভূমি। পড়ে পড়ে স্বপন দেখা, আদতে এমন নদী এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে শুয়ে আছে মৃতবৎ ..

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews