সরকারের প্রণীত নীতিমালা পর্যালোচনা করে আজ সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা লিপি, অনীক আর হক ও তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, সরকার নীতিমালা চূড়ান্ত করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সে প্রজ্ঞাপনটি দাখিল করার পর তা পর্যালোচনা করে আদালত পর্যবেক্ষণসহ নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, নীতিমালায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা নেই। তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নীতি যুক্ত করা যেতে পারে।
আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে এ আইনজীবী বলেন, তিন মাসের মধ্যে নীতিমালাটি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার ৪ নম্বর নীতি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫.১০ নম্বর নীতি অনুসারে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সে শিক্ষককে কাউন্সিলিংয়ের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিলেও হাইকোর্ট মামলাটি চলমান রেখেছেন।এর ফলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে বুলিং, র্যাগিং সংক্রান্ত প্রতিকারের জন্য আদালতে দ্বারস্ত হওয়া যাবে বলে জানান আইনজীবী তানভীর।
আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, নীতিমালা হওয়া একটি ইতিবাচক দিক। প্রণীত নীতিমালার আরো ইতিবাচক দিক হলো, এই নীতিমালাটি প্রয়োজনে সংশোধন, পরিমার্জনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ আইনজীবী আরো বলেন, নীতিমালায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে যেসব করণীয় বলা আছে, তা ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
ওই আদেশে ‘বুলিং’ও শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে জাতীয় নীতিমালা তৈরি করতে অতিরিক্ত শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেন আদালত। ওই কমিটিকে অরিত্রীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা আদালতে দাখিল করে। পরে সংশোধন, পরিমার্জন করে নীতিমালাটি কয়েক দফা আদালতে দাখিল করা হলেও তা চূড়ান্ত হয়নি।
এর মধ্যে ২০২১ সালে বুলিং নিয়ে আরেকটি রিট হয় হাইকোর্টে। মোটা বলে সহপাঠী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনার শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে শিরোনামে ওই বছরের ৮ জুলাই বিবিসি নিউজ একটি সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত সংবাদটি যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভির আহমেদ।
সেই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২২ আগস্ট আদালত রুলসহ আদেশ দেন। ক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং রোধে নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। বিষয়বস্তু এক হওয়ায় স্বতঃপ্রণোদিত রুলের সঙ্গে রিটে জারি করা রুল একসঙ্গে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম দফায় খসড়া নীতিমালা দাখিলের পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
তখন আদালত কিছু পরিমার্জন করতে বলে। নির্দেশ অনুযায়ী সেসব পরিমার্জনের পর সরকার নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে। পরে গত ২ মে নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারির পর ২৯ মে নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করে সরকার। সেটি উপস্থাপনের পর রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।