দীর্ঘদেহি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দে আষাঢ় মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে পুরীধামে ৪৮ বছর বয়সে গান গাইতে গাইতে ঢুকেন জগন্নাথ মন্দিরে৷ ভক্তরা তাঁকে আর দেখেননি৷ তাঁর জাতপাতহীন বৈষ্ণব চেতনা ব্রাহ্মণদের চতুবর্ণ প্রথার পরিপন্থী ছিল৷ ওই মন্দিরের ভিতরেই তার লীলাবসান ঘটে। প্রচার হয় পুরীধামের জগন্নাথের দেহাভ্যন্তরে তিনি লীন হয়ে যান। কিন্তু ২০০০ সালে ঘটে এক ভিন্ন ঘটনা৷ ওই মন্দির সংস্কার করতে গিয়ে এর মেঝের নিচে আবিস্কৃত হয় এক দীর্ঘদেহি নরকঙ্কাল! মন্দিরের ভিতরে ছয়ফুটি কঙ্কাল নিয়ে হইচই হয়৷ কার্বন টেস্ট করে জানা যায় এই কঙ্কালের বয়স ৫ শ বছরের বেশি এবং মৃত্যুর সময় বয়স ছিল প্রায় ৫০! কি ঘটেছিল ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বুঝতে অসুবিধা হয় না৷ অলৌকিক ব্যাখ্যাহীন বিশ্বাসগুলো এভাবেই লৌকিক হয়ে যায়৷
খ্রিষ্টাব্দ ধরা হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মক্ষণ থেকে৷ ৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাটের নির্দেশে যিশুকে ধরে আনা হয়৷ ধর্ম প্রচারের জন্য তাকে নগ্ন করে প্রথমে পীত্ত মিশিয়ে প্রহার করা হয়৷ অর্ধমৃত অবস্থায় তাঁকে ক্রুসে ঝুলিয়ে দেয়া হয়৷ কপালে, হাতে, পায়ে গজাল মেরে দেয়া হয়৷ ক্রসবিদ্ধ যিশু আরো ছয় ঘণ্টা কষ্ট সহ্য করে বেঁচেছিলেন৷ তখন এভাবে রক্ত ঝরিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে শাস্তির প্রচলন ছিল৷ আমরা দাসবিদ্রোহীদেরও এভাবে হত্যা করতে দেখেছি৷ কিন্তু হত্যার পরেই ঘটতে থাকে বিস্ময়কর ঘটনা৷ শত শত মানুষ যিশুকে বিভিন্নভাবে উপলব্দি করতে থাকে৷ যিশুর শত্রু সেইন্ট পলও এমন একটি উপলব্ধি থেকেই খ্রিষ্টান হন এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারে যিশুর চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখেন৷ প্রচার চলতে থাকে যিশু শিঘ্রই আসবেন৷ খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থে তার ফিরে আসার কথা বলা আছে৷ এমনকি ইসলামিক গ্রন্থেও তার নবী মুহাম্মদের অনুসারী হিসেবে ফিরে আসার কথা বলা আছে৷ অবশ্য কোরআনে( ৪:১৫৭ ) বলা আছে, ‘না তাকে হত্যা করা হয়েছে, না তাকে শুলীতে চড়ানো হয়েছে’৷ বাস্তবতা হল খ্রিস্ট ধর্মানুসারে অচিরেই তিনি ফিরে আসেননি৷ ওইসব উপলব্ধি ছিল মস্তিষ্কের তৈরি করা বিভ্রান্তি৷ যার ভাল উদাহরণ সাঈদী!
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী যুদ্ধাপরাধের জন্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়৷ ওই রাতে আকাশে ছিল পূর্ণ চাঁদ৷ মাঝরাতের পরে তার হাজার হাজার অনুসারী চাঁদে সাঈদীকে দেখতে পায়৷ তার আগেই বহু মন্দিরে হামলা হয়৷ আরো পরে ফাঁসির আদেশও বদলে যায়, দেয়া হয় কারাদণ্ড! ওই চাঁদে দেখাটাকে আমরা ‘অবচেতন মনে মস্তিষ্কর বিভ্রান্তি তৈরি করা’ বুঝতে পারি৷ ফ্রয়েডের ব্যাখ্যা কি যিশু-সাঈদীর মাঝখানেও যায়?
মুসা আ. এর মৃত্যু ছিল ভিন্ন মাত্রার৷ আজরাইল তাঁর জান কবজ করতে এলে এক থাপ্পর দিয়ে উল্টো তার এক চোখ নষ্ট করে কানা করে দেয়৷ এরপর স্রষ্টা গায়েবিভাবে তাকে জানায়, তাঁর মৃত্যুর সময় হয়েছে৷ এটা হতে পারে যিশুর জন্মের ৫শ বছর আগে বা তারও আগে! তখন তার বয়স হয়েছিল ১২০ বছর৷ আমরা নবী মুহাম্মদ সা. এর জীবনেও দেখি তিনি শত্রুর পাথরে দাঁত হারান এবং এক ইহুদী নারীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করে বিষক্রীয়ায় অসুস্থ হন৷ তাঁর আয়ুষ্কাল মুসা আ. এর প্রায় অর্ধেক৷ মুছা আ. এর বড় মাজেজা হল লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া৷ তখন অন্যরাও লাঠিকে সাপ বানাতো৷ মুছা আ. এমন একটি সাপ বানালেন যে, ছোট সাপগুলোকে খেয়ে ফেললো মুছা আ. এর বড় সাপটি৷ তার মানে ওখানকার অনেকেই লাঠিকে সাপ বানাতে পারতেন৷ মজার বিষয় আজো অনেক জাদুকর লাঠিকে সাপ বানাতে পারেন৷
আমরা সেমিটিক ধর্মের প্রধান তিন প্রবর্তকের মৃত্যু মিলাতে পারি৷ মুসা আ. ১২০ বছর, যিশু আ. ৩৩ বছর ও নবী মুহাম্মদ সা. ৬২ বছর বয়সে মারা যান৷ তাদের মৃত্যুর ধরনও সম্পূর্ণ আলাদা৷ মুসা আ. স্রষ্টার সরাসরি আদেশে নিজের ইচ্ছায় মারা গেছেন৷ যিশুকে বলা হয় ঈশ্বরের পুত্র৷ নবীদের মধ্যে তাঁর মৃত্যুই সবচে যন্ত্রণাদায়ক৷ নবী মুহাম্মদ সা. রোগাক্রান্ত অবস্থায় মারা যান৷ স্রষ্টা তার প্রিয় রাসুলদের রক্ষা করেননি৷ ফলে মুছা আ. এর থাপ্পরটা গল্প হলেও বাকি দুজনের মৃত্যু একেবারেই লৌকিক হয়ে উঠেছিল৷
আমরা আরো বহু উদাহরণ টানতে পারি৷ অলৌকিক ঘটনাগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারি৷ নতুন ধর্ম আনতে গিয়ে বিশ্বব্যাপীই ধর্মপ্রবর্তকরা ও অন্যরা— অলৌকিক শক্তির দাবিদার সুফি, সেইন্ট, পীর থেকে ফকির-ফক্কর বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকারও হয়েছেন৷ এসব নিয়ে ছড়িয়েছে বিভিন্ন অলৌকিকতা৷ বিভিন্ন মনস্তত্ত্ব ও যুক্তি প্রমাণ দিয়েই আজ এসবের ব্যাখ্যা দেয়া যাচ্ছে৷ আবার আজো কিছু লোক অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর দাবি করেন৷ যেমন তারা ফু দিয়ে সন্তান বানান৷ কিন্তু অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসে প্রকৃত সত্য৷ পীর-ফক্করগণ কিভাবে চেতনা-নাশক বা যৌন-উত্তেজক ওষুধ খাইয়ে নারীর ডিম্বাশয়ে শুক্রাণু ঢুকিয়ে তৈরি করে দিচ্ছেন অলৌকিক ভ্রূণ! সবগুলো অলৌকিক ঘটনারই রয়েছে লৌকিক প্রতারণা!!