ভারতে মুসলিম অভিনেতাদের সিনেমা বর্জনের একটা ঢেউ উঠেছিল৷ খানদের সিনেমা পরপর ফ্লপ করলে ধরে নেয়াই হয়েছিল, বিজেপির সমর্থকদের বর্জনের ডাকেই আমির-শাহরুখ- শালমানরা কুপোকাত হয়ে যাচ্ছেন৷ অভিনেতারাও সেটাই ধরে নিয়েছিলেন৷ শাহরুখ জোরহাতে আকুতি জানান পাঠান বয়কট না করতে৷ বয়কটের ডাক আরো শক্তিশালী হয়৷ পাঠান সিনেমাটি নিষিদ্ধের দাবী তোলা হয়৷ দাবির পক্ষে সোচ্চার হয়ে উঠেন কতিপয় মন্ত্রীও৷ যখন গেরুয়া রং এর বিকিনি পরা নায়িকা দিপিকার বেশরম রং গানটি প্রকাশ পায় তখন বয়কট ও নিষিদ্ধের ডাক জোরালো হয়৷ আগুন লাগানো হয় সিনেমা হলে৷ আতঙ্কবাদীরা উল্লসিত হয়ে উঠে৷
কিন্তু বিস্ময়করভাবে জেগে ওঠে ভারতের সিনেমাপ্রেমিরা৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে এই জেগে ওঠা পৌরণিক স্ফিনিকস পাখির মতোই জেগে ওঠা৷ ভারতীয় দর্শকদের ভালবাসায় সিক্ত পাঠান একটার পর একটা রেকর্ড ভাঙতে থাকে৷ ধুলোর মতো উড়ে যায় বয়কট/নিষিদ্ধের ডাক৷ ধর্মান্ধতার আঁধার চিঁড়ে উঁকি দেয় সংস্কৃতির সূর্য৷ সেই সূর্যটা আরো জ্বলে উঠলো শাহরুখের জওয়ানের জওয়ানিতে৷ জওয়ানের বয়কটের ডাকও উঠেছিল৷ বয়কটের ডাক হালে পানি পাচ্ছিল না৷ যদি আবারো সাড়া ফেলতো বয়কটের ডাক তাহলে সংস্কৃতির বিপক্ষস্রোত হড়কাবানে রূপ নিতো৷ এবং মুম্বাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিই ভেসে যেতো৷ পাঠান যদি প্রথম প্রতিরোধ হয় তাহলে দুষ্টু দমনের বাঁধ হয়ে উঠল জওয়ান৷
ধর্ম ভারতে একটা সমস্যা বটে তবে জওয়ান দেখছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সিনেমাপ্রেমি মানুষই৷ সিনেমায় কিছু মেসেজ, কিছু মসল্লা আর কিছু গল্প ছিলই যা হয়তো দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে৷ যদি ধর্মান্ধদের বয়কটের ডাকে কেবল নায়কের ধর্মীয় পরাচয়ের কারণে সিনেমাটি ফ্লপ করতো তাহলে মনে হতো ভারতের মানবতায় ফিরে আসা কঠিনতর হয়ে গেল৷ ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়াকে ভারতই অসাম্প্রদায়িকতার পথ দেখাতে পারবে৷ ভারত সাম্প্রদায়িক হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়াই সাম্প্রদায়িকতার বিষে নীল হয়ে যাবে৷