রাজশাহী নগরীতে হঠাৎ করেই ব্যাঙের ছাতার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে যত্রতত্র প্রচার উপকরণের ব্যবহার। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝুলছে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনসহ অন্যান্য প্রচার উপকরণ। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেবার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই। যার কারণে সিটি করপোরেশন মোটা অংকের রাজস্ব থেকেও হচ্ছে বঞ্চিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স পরিশোধ সাপেক্ষে প্রচার উপকরণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটিকে তোয়াক্কা করছেনা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।
দেয়াল লিখন ও পোস্টার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কোনও জায়গায় পোস্টার লাগালে বা দেয়ালে লিখলে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা অপসারণ না করলে শাস্তি হিসেবে অর্থদন্ড বা বিনাশ্রম কারাদন্ডের বিধান আছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের পর দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করলে সেই খরচও দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে বলেও আইনে উল্লেখ আছে।
শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুড়ে দেখাগেছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার ও শিক্ষাসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন সহ অন্যান্য প্রচার উপকরণের উপস্থিতি। যে যার মতো করে যত্রতত্র ঝুলিয়ে ও সাঁটিয়ে রেখেছে প্রচার উপকরণগুলো। যেসকল কোচিং সেন্টারের প্রচার উপকরণ প্রতিবেদকের চোঁখে পরেছে তারমধ্যে অন্যতম হলো, দ্যা রয়েল, ফোকাস, কনটেস্ট, ইউসিসি, মেডিকো, রেটিনা, উদ্ভাস, পপুলার, নিউরন, ইউনি এইড্, এ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জ, স্কলার, উন্মেষ, আইরিশ, আইকন, শহীদ ক্যাডেট একাডেমি, দুরন্ত, টাঙ্গাইল ক্যাডেট একাডেমি, কর্ণিয়া, ইসলামী নার্সিং, ওয়েভ, রিজভী সাইন্স কেয়ার, লুমিনাস, আমিন ইংলিশ একাডেমি, রাজ আইসিটি, এ্যাডভান্স কোচিং সেন্টার, ডিএনএ নার্সিং কোচিং, ডিএমসি নার্সিং কোচিং ও স্পন্দন কোচিং সেন্টার। এই কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচার উপকরণ শহরজুড়ে শোভা পাচ্ছে বিগত মাসখানেক ধরে।
জানতে চাইলে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশণের রাজস্ব কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন খোকন বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে কিছু কোচিং ব্যবসায়ি ও শিক্ষাসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণা স্বার্থে শহরের অনেকস্থানে ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন ঝুলিয়েছে। রাসিকের সংশ্লিষ্ট শাখার অনুমতি না নিয়ে এই ধরনের প্রচারনা কি বৈধ ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাযথ নিয়মে অনুমতি না নিয়ে প্রচার উপকরণের ব্যবহার অবৈধ বিধায় সেগুলো নামিয়ে ফেলার বা অপসারণ করার জন্য গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্নস্থানে রাসিকের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা আরো দাবি করেন, মাইকিং করার পর কাদিরগঞ্জ এলাকার কিছুস্থান থেকে পোস্টার সরিয়ে ফেঁলেছে প্রতিষ্ঠান মালিকরা। কিন্তু সমস্ত নগরীজুড়ে হাজারো পোস্টার-ব্যানার ও অন্যান্য প্রচার উপকরণের তুলনায় সরিয়ে ফেলা পোস্টারগুলো সংখ্যা বিবেচনায় যৎসামান্য। রাসিকের পক্ষ থেকে কোন দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, আমরা ঐসকল প্রতিষ্ঠানকে দাপ্তরিকভাবে চিঠি দিয়ে অবগত করবো। তারপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেগুলো অপসারণ করা হবে।
রাসিকের রাজস্ব শাখার দেয়া তথ্য মতে, পোস্টার ও ব্যানারের সাইজ অনুযায়ী স্কয়ার ফিট হিসেবে প্রচার উপকরণ ব্যবহারের খরচ নির্ভর করে। অর্থ্যাৎ কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণার স্বার্থে প্রচার উপকরণ হিসেবে পোস্টার ব্যবহার করলে প্রতিদিনের হিসেবে একটি পোস্টারের জন্য ৭ থেকে ১০ টাকা করে রাসিক কর্তৃপক্ষকে ট্যাক্স হিসেবে পরিশোধ করা নিয়ম আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মরতরা জানান, কোন প্রতিষ্ঠান যদি পাঁচশ পোস্টার একমাসের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেয়, তবে সাত টাকা হিসেবে ঐ প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স দিতে হবে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। একই নিয়মে যদি নগরীর ২০টি কোচিং সেন্টার বা শিক্ষাসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার প্রচারণার জন্য প্রচার উপকরণ নগরীতে ব্যবহার করে তাহলে সেটির বিপরীতে ট্যাক্স হিসেবে রাসিকের রাজস্ব শাখাতে পরিশোধ করতে হবে ২১ লাখ টাকা। কিন্তু দেশে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির কোচিং ব্যবসায়ি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের প্রচার উপকরণ ব্যবহারে হুমরি খেয়ে পড়েছে।
রাজস্ব শাখার দায়িত্বরতদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এখন পর্যন্ত মোট কতগুলো কোচিং সেন্টার ও অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি মান্য সাপেক্ষে (ট্যাক্স প্রদেয়) প্রচার উপকরণ ব্যবহার করছে। প্রশ্নের জবাবে দায়িত্বরতরা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে রাসিকের অধিকাংশ শাখা বা দপ্তর এখনো পরিপূর্ণভাবে কাজে ফিরতে পারেনি। কোন ফাইল কোথায় আছে সেগুলো খুজে বের করে আমরা নতুন করে কাজ শুরু করবো।
এবিষয়ে রেটিনা কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোঃ আতিক বলেন, আমরা বরাবরই নিয়মনীতি মেনেই প্রচার উপকরণ ব্যবহার করি। গতমাসের প্রথমদিকে (আগস্ট) রাজম্ব শাখার অনুমতি ও ট্যাক্স প্রদেয় সাপেক্ষে আমরা প্রচার উপকরণ ব্যবহার করিছ। দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও নগর ভবনের অবকাঠামোগত ক্ষতিসাধনের পরে নতুন করে আর অনুমতি নেয়া হয়নি। স্বাভাবিক হলে আমরা আবারো অনুমতি নেবো।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট