উত্তরের জনপদে শীতের আগমন ঘটেছে বেশ কিছুদিন আগেই। বগুড়ার সোনাতলাতেও শীতের বরণ পর্ব চলছে ফসলের মাঠে ও পাড়ায় মহল্লায় এবং বাড়ির ছাদে। এখন উত্তরাঞ্চলের যেখানেই যাবেন ষড়ঋতুর শীতকালের দারুণ আমেজ উপভোগ করতে পারবেন অনায়াসে। সকালে চাদরমুড়ি দিয়ে কুয়াশায় ভেজা ঘাঁসের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের চারপাশে অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে নিশ্চিত হারিয়ে যাবেন এই বাংলার সৌন্দর্যে।
ফসলের মাঠে যেমন একদিকে ধান কাটা নিয়ে কৃষক ব্যস্ত অন্য দিকে শীতকালীন সবজি চাষে আবারও সবুজ হয়ে উঠছে ফসলে মাঠ। গ্রামে গ্রামে গাছিরা খেজুর গাছ কেটে রস নামিয়ে মজাদার খেজুরের গুড় তৈরির কাজ করছে ভোষন রসিকদের জন্য। খেজুর গুড়ের ভাপা পিঠার কথা শুনলে কার জিভে জল না আসে! ঠিক একই ভাবে বাড়ির উঠোনে বা খোলা ছাদে যেখানে সকালের সোনা রোদ থেকে গোধুলী লগন পর্যন্ত রৌদ্র খেলা করে এমন জায়গায় গৃহীনিদের বড়া বানানোর উৎসব শুরু হয়ে গেছে। উত্তর দক্ষিণের প্রতিটি জেলায় গ্রামসহ পৌর এলাকার শহরের ছাদে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন দল বেঁধে গৃহীনিরা বড়া বানানোর কাজে ব্যস্ত। মাসকলাইয়ের বড়া বানানোর নানান কৌশল আছে। মাসকলাইয়ের সাথে কোন কোন অঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে এই বড়া বানানো হয়। সেজন্য কোথাও কোথাও এই বড়া কে কুমুড় বড়ি বলে থাকে।
তিন থেকে চার দিনের প্রস্তুতি নিতে হয় এই বড়া বানানোর কাজে। কাচা মাসকলাই বাছাই করে ছাঁটতে হয় এরপর সারারাত ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়াতে হয়। এরপর শীল পাটায় পিষে মন্ড তৈরির সাথে সাথে হাতে ফেটিয়ে নিয়ে নিঁখুত ভাবে পাতলা সুতী কাপড়ে অথবা বাঁশের চটাংয়ের উপর বড়া করে রাখা হয়। তারপর রোদে ভালো করে শুকাতে হয়। এরপর লাউ, মুলা, বেগুনের ঝোলের তরকারিতে দিয়ে এক অনন্য স্বাদের খাবার তৈরি করা হয়। মাটির পাতিলে ভেঁজে গুড়া করে কাঁচা পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে ভর্তা করেও খাওয়া যায়। ভালো করে শুকিয়ে বক্সে করে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত রাখা যায় এই বড়া। এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে এই বড়া তৈরে করছে বলেও জানা গেছে।
বানানোর কৌশল তো আছেই তার চেয়েও উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, বড়া বানানোকে কেন্দ্র করে আশেপাশের বাড়ির গৃহীনিদের যে সেতুবন্ধন তৈরি হয় তা দেখার মতো। যিনি বড়া বানাবেন তিনি আগের দিন প্রতিবেশি গৃহিনীদের জানিয়ে দেন সকালে বড়া দিতে হবে। প্রতিবেশিরা নিজ উদ্যোগে বিনা পারিশ্রমিকে শীতের সকালে রোদে বসে বড়া বানানোর কাজ করে। বানানোর সময় পান সুপারী খাওয়ার সাথে চলে নানা ধরণের গল্প। অবস্থা বুঝে কেউ কেউ আবার সবার জন্য খিঁচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। প্রতিবেশির প্রতি আন্তরিকতার নিঁখুত ছোঁয়ায় তৈরি হয় বড়া। সে এক আনন্দঘন মূহুর্ত, না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। বাঙালী গৃহিনীরা শুধু কবি সাহিত্যিকদের গল্প কবিতাতে নয়, এখনো তারা বাস্তবেও রয়েছে এই রূপসী বাংলার গ্রামে গ্রামে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট