1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৬ অপরাহ্ন

অরূপ গোস্বামীর ধারাবাহিক ‘আমার ছোটো দিদি’

অরুপ গোস্বামী
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৪
প্রথম পর্ব
স্বপ্না ভট্টাচার্য আমার ছোটো দিদি, আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়ো। মাত্রই ছেষট্টি বছর বয়সে চলে গেলো।ওর চলে যাবার আজ দশদিন। এই দশটা দিন অনেক ব্যস্ততা ও ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গেলো। আগে থেকেই টিকিট করা থাকায় গত ত্রিশ তারিখ রাতে ছেলেদের কাছে চলে এসেছি। দিদির মৃত্যুর পর থেকে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে দিন কাটছে। ওর মৃত্যু এতো আকস্মিক যে মেনেই নিতে পারছি না।ওর তেমন কোনো অষুধ খেতে হতো না।কিন্তু এতোটা হঠাৎ করে ও চলে যাবে ভাবতেই পারিনি।
আমাদের ৫ ভাইবোনের মধ্যে ও মধ্যম।বড়ো দিদির বয়স ছোটো দিদির চেয়ে ১০ বছর বেশি। এখন ওর
৭৬ চলছে। আমরা ভাইবোন সকলেই কমবেশি অসুস্থ, নিয়মিত অষুধ সবারই খেতে হয়,কিন্তু ছোটো দিদির তেমন কোনো অষুধ খেতে হতো না। জিজ্ঞেস করলে বলতো,আমি দিব্য আছি।
ওর সম্পর্কে লিখতে বসে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারছি না।১৯৭৩ সালে ওর যখন ভারতে বিয়ে হয়,তখন আমার বয়স ১১ বছর। কেন ওকে ভারতে বিয়ে দেয়া হয় তা সঠিক মনে নেই।হয়তো সদ্য স্বাধীন দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বাবা কাকারা দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অথবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে, আমি সঠিক মনে করতে পারছি না।ও নিয়মিত বাবার বাড়ি আসতে পারতো না,আমাদের যাওয়াও ছিল অনিয়মিত।পাসপোর্ট ভিসার জটিলতায় যাতায়াত এতো সহজসাধ্য ছিল না।ওর বিয়ের দুই আড়াই বছর পর ১৯৭৫ সালে সম্ভবত দাদা প্রথম ছোট দিদির বাড়ি বেড়াতে যায়।দিদি প্রথম আসে ১৯৭৭ সালে। তখন ওর দুই ছেলে জয়,সন্তু (ওদের নাম)।পরে এক মেয়ে হয়, নাম অর্পিতা।
আমি ১৯৮৬ সালে প্রথম দিদির বাড়ি বেড়াতে যাই।সেবার আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র।শিক্ষা সফরে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কলকাতা ফিরে আসি।দলের ২১ জন ফিরে গেলেও সাখাওয়াত ও আমি থেকে যাই।সাখাওয়াতের ফুফুর বাড়ি উখরায়। দিদির বাড়ি অন্ডাল থেকে তেমন দূরে নয়।
সেবার শিক্ষা সফরের শেষ দিকে আমি অসুস্থ হয়ে যাই।জ্বর জ্বর ভাব,কখনো জ্বর আসে,আবার ছেড়ে যায়।বেশ দূর্বল হয়ে গেল শরীর। এমন শরীর নিয়ে দেশে ফিরে যাবো ভাবলেও দিদির সাথে দেখা না করে যেতে মন চাইছিল না।আবার ভিসার মেয়াদও শেষের দিকে। এমন দোলাচলের মধ্যেই দিদি অন্ডাল থেকে একজনকে পাঠিয়ে আমাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করে সাখাওয়াত ও আমাকে নিয়ে গেলে দিদিকে ওর পারিবারিক পরিবেশে প্রথম দেখলাম।
ওদের ছিল যৌথ পরিবার। ভাসুর, জা,তাঁদের ছেলেমেয়ে সকলেই একসাথে থাকে। সকলেই রেলের কর্মচারী। সারাদিন একসাথে থাকা, খাওয়া দাওয়া সবকিছুই একত্রে,রাতে শুধু আলাদা কোয়ার্টারে ঘুমানো। কোনরকমে রাতটা কাটিয়ে খুব সকালেই আবার একত্রিত হওয়া। দেখলাম দিদি গোটা পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে ও পরিবারের কেন্দ্রীয় চরিত্র। দিদির ওখানে যাওয়ার পর ডাক্তার দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখা গেলো আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে। ডাক্তারের অষুধে এবং দিদির সেবাযত্নের কারণে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলাম। মনে একরাশ প্রশান্তি ছিল। দেখলাম একটা ষোল বছর বয়সী মেয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে বলা যায় একরকম স্বজনহীন পরিবেশে গিয়ে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। শুধু মানিয়ে নেয়া নয়,স্বামী ভাসুর জা,ভাইপো ভাইঝি সকলের মনের
গভীরে জায়গা করে নিয়েছে। (চলবে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews