1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার এখনই সময়

মোঃ আব্দুল মালেক
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মানব সৃষ্টির পর পৃথিবীতে আল্লাহ প্রেরিত প্রতিনিধি নবী-রাসূলগণের হাতেই সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় নের্তৃত্ব ছিল। হযরত আদম (আঃ) এর সময় তিনিই সমাজ, ধর্ম ও জাতীয়র নেতা ছিলেন। অনুরূপ ভাবে হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সোলাইমান (আঃ) ও অন্যান্য নবী-রাসূল সহ সর্বশেষ হযরত মুহম্মদ (সঃ) একাধারে সমাজের নেতা, ধর্মীয় নেতা ও নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন। কিন্তু, নবুয়তের সমাপ্তীর পর নবী-রাসূলদের প্রতিনিধি হিসাবে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অদূরদর্শীতা, অজ্ঞতা, অদক্ষতা, ভোগ-বিলাসিতা, আত্মকেন্দ্রীকতায় ও যুগের পরিক্রমায় ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের হাত থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই শুন্য স্থান দখল করে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যান্য মতবাদ ও রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও ধারণা। ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের পূর্ব পযন্ত, শাসকরা ভাবত তারা ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নয়, তারা ঈশ্বরের প্রতি দায়বদ্ধ। সে সময় ফ্রান্স, রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে গীর্জা, সামন্ত প্রভূ ও রাজার ঐশ্বরিক অধিকার স্বীকার করা হত। জন লক, রুশ ও ভলতেয়ার তাদের লেখনী দিয়ে রাজার ঐশ্বরিক অধিকার অস্বীকার করে Majority জনগণের সমর্থনে শাসনের মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। রুশ ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। মন্টেস্কু জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থায় আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের মতবাদ প্রচার করার ফলস্বরূপ ফরাসী জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়।

রুটির দাম কমানোর জন্য জনগণের রাজপ্রাসাদ আক্রমণের মধ্যে দিয়ে ফরাসী বিপ্লবের সূচনা। বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্ততন্ত্রের অবসান হয়ে ব্যক্তিসমতা ও স্বাধীনতার উন্মেষ ঘটে। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জমে থাকা দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ ও গণজোয়ারে দীর্ঘদিন দাম্ভিকের মত ক্ষতায় থাকা সরকার দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। জনগণ হাফছেড়ে একটি গুমট রূদ্ধতা থেকে বেঁচেছে। জনগণের প্রত্যাশা তাঁরা একটি শোষণমুক্ত সমতাভিত্তিক মুক্তচিন্তার দেশ বা পরিবেশ লাভ করেছে। বিষটি একটি আপেক্ষিক বিষয় বটে।

১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজরা বাংলার নবাব সিরাঊদৌলাকে পলাশী প্রান্তে পরাজিত করে ধীরে ধীরে বাংলা তথা সমগ্র ভারত বর্ষের ক্ষমতা দখল করে। ইংরেজদের ব্যবসার প্রসার ও শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে একটি চাটুকার বান্ধব শিক্ষীত করণীক শ্রেণী তৈরী লক্ষ্যে ১৮১৩ সালের শিক্ষানীতি, ১৮৫৪ সালে গৃহীত উডের ডেসপ্যাস নীতি গ্রহণ করে দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দেয়। নৈতিকতাহীন ঐ ইংরেজ কর্মচারীদের কাজ ছিল ইংরেজদের পক্ষে কর আদায় ও দালালী করা। বাঙ্গালী তথা উপমহাদেশের জনগণের প্রতি তাদের কোন দায় বদ্ধতা ছিলনা। ২১০ বছর পর ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটলে তৎকালীন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র উত্তরাধিকার সূত্রে ঐ কর্মচারীই প্রাপ্ত হন। এর পর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভূত্থান ও ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভূদ্বয় হলে উত্তরাধিকারসূত্রে বৃটিশ বিষ-বাষ্প যুক্ত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের কর্মচারীদেরকেই আত্মীয়করণ করতে হয়।‘‘বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস” এ কথা উল্লেখ থাকলেও জনগণ ক্ষমতার উৎসতো দূরের কথা, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর দেখা যাচ্ছে জনগণ আজ জমিদারী আমলের মূল্যহীন প্রজায় পরিণত হয়েছে। সরকারী কর্মচারীগণ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরিবর্তে দলীয় সরকারের কাছে দায়বদ্ধ ও পদ লেহন করতে ব্যস্ত থাকে। সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তারা আজ বৃটিশ আমলের পাইক, পেয়াদা, কোঠাল, কালেক্টরের মতই সরকারের প্রতি দায়বদ্ধ এবং জনগণের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে। জনগণ অফিস-আদালতে সেবা গ্রহণের জন্য গেলে সেবা পাওয়ার তুলনায়, হয়রানীর স্বীকার বেশী হতে হয়। মানিকগঞ্জের উথলী উপজেলার গহেরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান (৬০), বিগত ০২/০৪/২০২৪ ইং তারিখে বোরধানের পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে গেলে কৃষি অফিসার, রাজিয়া তরফদার ও একজন উপসহকারী কৃষি অফিসার ঐ কৃষক অফিসারদ্বয়কে স্যার বলে সম্বোধন না করার অপরাধে সেবা প্রার্থী কৃষকে পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করেদেন। আবার, বংপুর জেলার DC জনাব চিত্র লেখা নাজনীন’কে স্যার সম্বোধন না করায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’র হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জনাব ওমর ফারুক কে জোর করে স্যার বলতে বাধ্য করেন। জামালপুরের UNO একজন সাংবাদিকে স্যার না বলায় গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করে। আরও অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। এমকি ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা, গ্রেড-১৬, তাদেরকেও স্যার বলে সম্বোধন না করলে ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এই অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয়না। রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তরে কর(Tax) দাতারা মাসিক হিসাব বিরণী জমা দিতে গেলে শুধুমাত্র রিসিভ কপিতে সিল দেওয়ার জন্য উৎকচ দিতে হয়, না হলেই ঝামেলায় পড়তে হয়। অথচ, তাদের বেতন-ভাতা হয় জনগণের দেওয়া কর(Tax) এর টাকায়। বিগত দলীয় সরকারগুলো কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারীতা প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা বরং সরকারী কর্মচারীদের অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়েছে বহুগুণে। যার পরিণতিতে ছাত্র-জনাতার আন্দোলন ঠেকানোর জন্য শুধু পুলিশবাহিনী নয় বরং সকল স্তরের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলন প্রতিহত করতে একাট্টা হয়েছিল। এখন গণেশ উল্টে গেছে, থানা পুুলিশ, ট্রাফিক পুলিশকে দেখে মনে হচ্ছে তারা ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা। কর্মস্থলে তাদের বিচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা শুধুমাত্র সময় অতিবাহিত করছে। অন্যান্য অফিস-আদালতের চিত্র একই রূপ। এখন সময় এসেছে জনগণের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার এবং নেয়ার।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ‘‘এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
১৩৫(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে প্রজাতন্ত্রের কর্মে অসামরিক পদে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি তাহার নেয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা অধস্তন কোন কর্তৃপক্ষের দ্বার বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনিমিত হইবেন না।
১২০ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে এই ভাগের অধীন নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে সেই রূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।
সংবিধান হইল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান প্রজাতন্ত্রের জন্য কর্মচারী নিয়োগের ও বরখাস্তের ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু, জাতীয় সংসদ, সরকার ও রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের জন্য কর্মচারী নিয়োগের পাশা পাশি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে কোন জরুরী অবস্থা বলবৎ নেই, সংবিধান বলবৎ। সুতরাং, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোন ব্যক্তির মর্যাদা কর্মকর্তা হতে পারেনা, হলে তাহা সংবিধানের পরিস্কার লংঘণ। কর্মকর্তা শব্দটি সংবিধানের সর্বোচ্চ আইনী মর্যাদাকে ভূলুষ্ঠিত করেছে, কর্মকর্তা শব্দটি সংবিধানের সাথে সাংর্ঘষিক (Ultra Virus)। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারীভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীদের পদবী গণকর্মচারী হওয়া উচিত। মর্যদাগত পার্থক্য বুঝানোর জন্য গণকর্মচারী (গ্রেড-১), গণকর্মচারী (গ্রেড-২), গণকর্মচারী (গ্রেড-৩) . . . . . . . . . গণকর্মচারী (গ্রেড-১৯), গণকর্মচারী (গ্রেড-২০) এভাবে বিন্যস্ত হওয়া আবশ্যক। এতে সংবিধানের মর্যাদাও যেমন রক্ষা পাবে আবার সরকারী চাকুরী পাওয়ার পর জনগণের Tax এর পয়সায় বেতন-ভাতা পাওয়া গণকর্মচারীদের আতœ-অহমিকাও কমবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মাননীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রতি জনগণের দাবী এখন থেকে সরকারী অফিসে যে ব্যক্তি সেবা গ্রহণ করতে যাবেন, সেবা গ্রহীতা নয়, বরং গণকর্মচারীগণ সেবা গ্রহীতাকে স্যার বলে সম্বোধন করবেন। এই মর্মে গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণকর্মচারীদের অবহিত করা আবশ্যক। সেবা প্রার্থী আমজনতা খুশি হবেন। আবার বাংলাদেশ সংবিধানের মূল স্প্রিট এর প্রতিফলন ঘটবে। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্টিতা এবং একটি স্বচ্ছ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অন্তবর্তী সরকার মাননীয় উপদেষ্টামন্ডলী তাঁদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া সহ প্রকাশ করবেন। একই সাথে প্রজাতন্ত্রের কর্মেনিযুক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্পদের হিসাব বিবরণী তলব করে একটি নজির সৃষ্টি করবেন। তা-না হলে মাননীয় উপদেষ্টা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব তলবের বিষয়টি অতীত রাজনৈতিক সরকারের মতোই কথার কথা হয়ে থাকবে।

লেখকঃ সমাজকর্মী ও অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews