1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

প্রতিবাদে কি কাজ হয়?

মজিব রহমান
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩
অনেক সময় মনে হয়, প্রতিবাদে বুঝি কোন কাজ হয় না! উল্টো ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিবাদ না হওয়া সমাজে একটা ভীতি কাজ করে। মানুষ মনে করে প্রতিবাদ করলে কাজতো হবেই না উল্টো বিপদে পড়তে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এমন ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। উল্টো সন্ত্রাসী ও নিপীড়কদের মধ্যেই মারাত্মক ভীতি কাজ করে। সেই ভীতির কারণে সন্ত্রাসীরা তাদের দাঁত বের করে অন্যকে ভয় দেখাতে চায়। কেউ ভয় না পেলেই তাকে ভাগ দিতে চায়। ভাগ না নিতে চাইলে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে চায়। সেটাও না করলে একসময় সন্ত্রাসী ফেঁসে যায় এবং ওদের বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।
আমাদের স্কুলে একজন মাদকাসক্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাদক নিতে ক্লাসেই উৎসাহিত করতেন। মদককে প্রাকৃতিক উপাদান বলে এর উপকারিতার কথা বলে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতেন। ওই শিক্ষকের সাথে আন্ডারওয়াল্ডের সম্পর্ক থাকায় অনেকেই সমঝে চলতো। জানতে পেরে অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানালাম। অধ্যক্ষ বাধ্য হলেন তাকে ডাকিয়ে জিজ্ঞাসা করতে। তিনি অস্বীকার করলেও আর কখনোই ক্লাসে সরাসরি মাদকের পক্ষে বলেননি। আমাদের সরকারি শ্রীনগর কলেজের পদার্থবিদ্যার একজন প্রভাষক ক্লাসে বলতেন, ‘পদার্থবিদ্যার সকল সূত্রই এসেছে কোরআন থেকে’। তাকে চ্যালেঞ্জ করে ফেসবুকে পোস্ট দিতেই তিনি ভয় পেয়ে গেলেন এবং এসম মিথ্যা বলা বাদ দিতে বাধ্য হলেন। মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের গ্রেফতার হওয়ার সপ্তাহ খানেক পরে তুহিন ভাই বিষয়টি জানতে পেরে জানালেন। আমরা ফেসবুকেই প্রতিবাদ জানানো শুরু করলাম। শেষে শাহবাগে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি মুক্তি পেলেন। যাদের পক্ষে কেউ দাঁড়ায় না তারা এখনো জেল খাটছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিথি সরকারের পক্ষে কেউ প্রতিবাদে নামেনি বলেই তাঁকে পুরো দুই বছর জেল খাটার পরে মামলাটি বাতিল হয়। তার জীবন থেকে কেড়ে নেয়া দুটি বছরই নয়, তার পুরো জীবনটাই ধ্বংস হয়ে গেছে ওই মিথ্যা আইসিটি মামলায়। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহপাঠীও তাঁর পক্ষে দাঁড়ায়নি। তিনি একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা পোস্ট দিয়েছিলেন। তারই সহপাঠীরা তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করলে সবাই ভয় পেয়ে যায়। যদি ১০জন শিক্ষার্থীও তার পক্ষে দাঁড়াতো তাহলেও সে মুক্তি পেয়ে যেতো।
সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ যদি প্রতিবাদ না করে ভূট্টো ও ইয়াহিয়ার টালবাহানা মেনে নিতো তাহলেতো দেশই স্বাধীন হতো না। ইতিহাসে উত্তরণের প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে প্রতিবাদের কারণে। অনেকে ভয়ে মনে মনে প্রতিবাদ করার কথা বলেন। মনে মনে প্রতিবাদের কোন মানে হয় না। প্রকাশ না ঘটলে সেটা প্রতিবাদ হিসেবেই গণ্য হবে না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে উত্তাল না হলে উনসত্তরে গণঅভ্যুত্থান ঘটতো না। আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে ঘোষণা দেন সত্তরের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার। গত পরশু ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে দেখলাম মাধ্যমিকের শিক্ষকগণ জাতীয় করণের জন্য আন্দোলন করছেন। আগে তারা মূল বেতনও পেতেন না। তারা আন্দোলন করতে করতেই এখন মূল বেতনটা পান। চোখের সামনে এরশাদের পতনটা দেখলাম। কেবলমাত্র ছাত্র আন্দোলনেই এরশাদের পতন ঘটলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডা. মিলনকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। সেই প্রতিবাদের জোয়ারেই মূলত এরশাদ ভেসে যায়। প্রতিবাদ করতে না পারলে আজ আমাদের ভাষা হতো উর্দু! ছাত্ররা সহস করে প্রতিবাদ করায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়। সেই প্রতিবাদের সোপান ধরেই আসে স্বাধীনতা।
আমাদের কৈশোরে আমাদের এলাকায় একটি প্রেমের ঘটনায় একটি মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে, ছেলে পক্ষ বেঁকে বসে। আমরা প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠলাম। শুনেছিলম প্রভাবশালী কয়েকজন অনেক টাকা খেয়ে মেয়েটিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দরিদ্র মেয়েটির জন্য আমরা প্রতিরোধেই নামলাম এবং নেতারা বাধ্য হলেন আমাদের দাবী মেনে নিতে। সরকারি অফিসে গিয়ে দেখুন যে লোকটি প্রতিবাদ করে, সবাই দ্রুতই তার কাজ করে দেয়। সে ঘুষ না দিয়েই কাজটি করিয়ে নিতে পারছে। আবার যাকে দুর্বল ও প্রতিবাদহীন মনে করে, সরকারি কর্মকর্তারা তাকে পেয়ে বসে। তার কাজ করিয়ে নিতে জান বেরিয়ে যায়, বহু টাকাও বেরিয়ে যায়। আমাদের হাসপাতালটি হঠাৎ দখল হয়ে গেল। শুনলাম একজন লীজ নিয়ে এসেছেন। এসিল্যান্ডের সাথে দেখা করলে তিনি জানালেন ওনিতো মহান মানুষ। হাসপাতাল কক্ষটিরও তিনি মালিক কিন্তু দয়া করে কক্ষটি দখলে নেননি। প্রতিবাদেই কাজ হয়েছিল। ওই এসিল্যান্ড, টিএস, টিএনও, সিভিল সার্জন, ডিসিসহ আরো অনেকেই হাইকোর্টে করজোরে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে বলেছিল, ভুল হয়েছে, বুঝতে পারিনি, নিঃশর্ত মাফ চাই!
মানবিক সমাজ গঠন করতে হলে প্রতিবাদ অনিবার্য৷ পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার, ধর্ম ইত্যাদির অন্যায্যতার বিরুদ্ধে কথা বলাই প্রতিবাদ৷ প্রতিবাদ ছাড়া কোথাও গতি আসবে না৷ বিরোধী দল যদি প্রতিবাদে আরো আগে থেকেই সোচ্চার থাকতে পারতো তাহলে দেশে সুষ্ঠু ধারার গণতন্ত্রও থাকতো৷ প্রতিবাদে কাজ হয় না এমন ভাবাদর্শ যারা তৈরি করতে চায় তারা ফ্যাসিবাদের সঙ্গি৷ ওরা আমাদের ভয় দেখাতে চায়৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews