যদি সিন্ধু নদের অববাহিকায় এবং আরো পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকায় বসবাস করার জন্য নাগরিকদের হিন্দু বলা হয়ে থাকে তবে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের সব নাগরিকই হিন্দু। পারস্যের মানুষ সিন্ধুকে হিন্দু উচ্চারণ করায় এমনটা হয়েছিল। যদি সিন্ধু উচ্চারণ করতো তবে এখন হিন্দুদের বলা হতো সিন্ধু!
সিন্ধু সভ্যতা ৫ হাজার বছরের পুরাতন যা পাঞ্জাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল বিস্তৃর্ণ জনপদ জুড়ে। সিন্ধু সভ্যতা বিলুপ্ত হলেও ভারতীয় সভ্যতা প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মোটামুটি অবিকৃত রয়ে গেছে। রয়ে গেছে সিন্ধু থেকে আসা হিন্দু নামটিও। এখন ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভূটান, মায়ানমার আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। যদি হিন্দু নামটিকেও আলাদা করতে হয় তবে তা হওয়া উচিৎ শুধুই পাকিস্তানিদের জন্য। অর্থাৎ পাকিস্তানীদেরই হওয়া উচিৎ ছিল হিন্দু বা সিন্ধু। কারণ এখন পাকিস্তানিরাই সিন্ধু নদের অববাহিকায় বাস করে৷ যদি নদীর কারণে আমাদের জাতি নির্ধারণ করতে হয় তবে আমাদের বলা উচিৎ পদ্মা! বাংলা কোথায় আর সিন্ধু নদ কোথায়!
ভারত ‘সিন্ধু নদের দেশ’ গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষায় বহুল ব্যবহৃত শব্দ। যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে নদীটি সমুদ্রে মিশেছে সে অঞ্চলটি সিন্ধু নামে পরিচিত এবং এই নাম নদীটির (সংস্কৃত সিন্ধু) নাম থেকে নেওয়া। মেগাস্থেনিসের বই ইন্ডিকা নামটি, নদীটির গ্রিক নাম, ‘ইন্দোস’ থেকে এসেছে এবং Nearchus এর সমকালীন বিবরণটি বর্ণনা করে যে, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট নদী অতিক্রম করে এসেছিলেন। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের (বর্তমানের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলীয় ভারত ও পাকিস্তানের জনগণ) ‘ইন্ডোই’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যা আক্ষরিক অর্থে ‘সিন্ধুর মানব’। এই প্রাচীন সভ্যতাটি আর্য, দ্রাবিড় (অস্ট্রালয়েড), মঙ্গোল এমনকি সুমেরীয়দেরও মিলিত সৃস্টি।
প্রাচীন সকল তথ্যই এটা নিশ্চিত করে যে, ভারত বর্ষের মানুষকেই সিন্ধু নদের কারণে হিন্দু বলা হয়। এখানে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ বাস করতো যারা সকলেই হিন্দু নামে পরিচিত ছিল। আমার পূর্বপুরুষ অবশ্যই হিন্দু ছিল ভারত বর্ষের নাগরিক হিসেবেই এবং সম্ভবত তারা বৈদিক এবং আরো আগে সনাতন ধর্মেরও ছিল। হিন্দুরা দাবি করে তারাই সনাতন মানে আদি! বাস্তবিক ভারতের সেই সনাতন ধর্মের মানুষ— যারা প্রকৃতির আরাধনা করে সনাতন ছিল, বৈদিকরা সে বিশ্বাসের আরাধনা করতো না৷ বেদ আসার পরেই না বৈদিক হয়েছে৷ ঋকবেদে সিন্ধু নদের কথা বলা আছে৷ অর্থাৎ ৩ হাজার বছর আগে শুরু হওয়া আর্যদের ধর্ম যারা পালন করে তারা বৈদিক৷ এর আগের প্রকৃতি পূজারীরা হতে পারে সনাতন৷ তারা সূর্য, চন্দ্র, নদী, শিলা, পাহাড়, বৃক্ষ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের পূজা করতো৷
মানে হল আমি ৫ হাজার বছরের বেশি আগের সনাতন, তিন হাজার বছরের বৈদিক। আর সিন্ধু নদের উপকূলে গড়ে উঠা সভ্যতার সময় থেকে এখানকার সব মানুষের মতোই আমিও হিন্দু৷ হিন্দু শব্দটি আজ একটি ধর্মের মানুষ নিয়ে গেছে তাতে আপত্তি নেই কারণ আমরা বাস্তবিক সিন্ধু অববাহিকার নই যদিও আমার পদ্মানদীর জলও মানস সরোবরের, সিন্ধুরও। আমার পূর্বপুরুষ মুসলিম হয়েছে কয়েক শত বছর আগে ধরি ৫ শ বছর আগে (কারণ বাংলায় মুসলিমরা এসেছে ৮ শ বছর আগে)। এই যে আমার ভিতরে প্রবাহমান সাড়ে ৪ হাজার বছরের হিন্দু সভ্যতা তাকে কিভাবে অস্বীকার করবো? আমার বংশগতির ৫ হাজার বছরের ইতিহাস বিবেচনা করলেও তার ৯০% + ই হিন্দু! প্রাচীন হিন্দুস্তানের নাগরিক কি আমরা নই? কিভাবে নই? আমার পূর্বপুরুষ কি বৈদিক/সনাতন ধর্মের নয়? আমার শরীরেতো সেমিটিক আরবের রক্ত নেই। ভারতের অধিকাংশ হিন্দু ও মুসলমান পরস্পরের আত্মীয়, একই জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ। বিদ্বেষটা করেছে ধর্মব্যবসায়ীরা, হিন্দু ধর্মের ভিতরের বিভাজনটাও করেছে তারাই। আমাদের শত্রু কে তা আমাদেরই চিহ্নিত করতে হবে!