1. fauzursabit135@gmail.com : Fauzur Rahman Sabit : Fauzur Rahman Sabit
  2. sizulislam7@gmail.com : sizul islam : sizul islam
  3. mridha841@gmail.com : Sohel Khan : Sohel Khan
  4. multicare.net@gmail.com : অদেখা বিশ্ব :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ন

অরুপ গোস্বামীর অজানা কথা ”আমার আক্ষেপ” পর্ব-০২

অরূপ গোস্বামী
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩
গত পর্বের লেখার মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কেউ কেউ নিরব থেকেও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আসলে গতকাল যা লিখেছি তার মধ্যে সিরিয়াস যেমন কিছু ছিল, তার সাথে কিছুটা মজাও ছিল। আমি যে ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ তা আমার চেনাজানা সকলেই মানবেন। সেজন্যই একজন যথার্থই বলেছেন, আমার কাছে এমন নেতিবাচক লেখা আশা করেন না।আর একজন প্রিয় বন্ধু আমার লেখায় হতাশা খুঁজে পেয়েছেন।এমনকি স্ট্যামিনার অভাব, এমনকি আমাকে দিয়ে তাহলে তো কিছুই হবে না, বলে মন্তব্য করেছেন। এসব কারণে লেখার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হচ্ছে। কারণ লেখক বাঁচে পাঠকের পড়ায়।পাঠক যদি পড়ে সুখ না পায় তবে তেমন লেখার কী প্রয়োজন!
তবে আক্ষেপ তো অনেক আছে। প্রতিটি মানুষেরই থাকে।কারও জীবনেই সকল স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয়।
তবে সব আক্ষেপের কথা প্রকাশ করাও বিপদ।
অনেকে রেগেও যেতে পারে।অন লাইনে বিতর্ক সৃষ্টি করা আমার উদ্দেশ্য নয়,সেটা উচিতও নয়।তাই সেদিকে যাব না।তবে এক কথায় বলা যায়,আমি যতটা দিই ততটা ফেরত পাই না।উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় অনেক কিছুই। তবে সবচেয়ে নিরাপদ উদাহরণ, গত বছরের আগস্ট মাসে ২০০ টা হাঁসের বাচ্চা কিনেছিলাম। অনেক ঝামেলা শেষে গত জুলাই মাসে সে পাট চুকিয়ে দিয়েছি।লাভের মধ্যে লাভ এইযে,,বড় রকমের লোকসান ছাড়াই সে প্রকল্পের ইতি টানতে পেরেছি। এর আগে ১৯৮৭ সালে একবার ধানের ব্যবসা করেও একই অবস্থা হয়, কেবল কয়েকটি বস্তা লাভ হয়েছিল।
যাক সেসব কথা, মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।আমার যেমন আক্ষেপ আছে, তেমনি আমাকে নিয়েও পরিবারের অনেক আক্ষেপ ছিল। প্রথম আক্ষেপ ডাক্তার হতে না পারা।বাবা একজন চিকিৎসক হওয়ায় তিনি মনে প্রাণে চেয়েছিলেন, আমি যেন ডাক্তার হই।কিন্তু ডাক্তার হতে না পারায় তাঁরা খুব হতাশ হন।ট্রাক চেইঞ্জ করে আইন বিষয়ে পড়ার পর ওকালতি না করে এটা সেটা করার চেষ্টা করায় পরিবারের হতাশা আরও বাড়ে।তবে বিলম্বে হলেও বিচারক হতে পারায় পরিবারের আক্ষেপ অনেকটাই কেটে যায়।
কিন্তু আমার আক্ষেপ এই যে, বাবা মাকে বেশিদিন পাইনি।বাবা আমার চাকরি পাওয়ার পর ৬ বছর এবং মা ৯ বছর বেঁচে ছিলেন। বাবা মাত্র ৭২ বছর এবং মা ৬৯ বছর বয়সে মারা যান। কতজনের বাবা মা কতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। তবে আমরা ভাগ্যবান এই কারণে যে,তাঁরা শেষ বয়সে আমাদের সাথেই ছিলেন । আমরা ২ ভাই তখন বাইরে থাকতাম। বাবা মা আমাদের দু’ভাই এর সাথেই থাকতেন। অনেক কষ্ট করে বাবা মা আমাদের বড়ো করেছেন। আমার সন্তুষ্টি এখানে যে,যখন তাঁদের কিছু করার ক্ষমতা ছিল না,তখন দাদা বৌদি এবং আমরা দুজন পালাক্রমে তাঁদের সেবা করতে পেরেছি। এখানে আক্ষেপ এই যে, সময়টা ছিল খুবই কম।
এ প্রসঙ্গে আর একটা আক্ষেপের কথা বলি।আমার কর্মজীবন নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।কিন্তু এখন মনে হয়,আমি যদি ডাক্তার হতে পারতাম, তবে আমাদের এলাকার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছে আমার বাড়িতে একটা দাতব্য ধরনের চিকিৎসা কেন্দ্র করার।কিন্তু এতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা’ আমার নেই।গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অনেক বঞ্চনার শিকার। তাদের জন্য এ দুটো খাতে কিছু করতে চাই।
শিক্ষাখাতে বড়ো কিছু না হলেও অনানুষ্ঠানিক একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম বছর দুয়েক আগে। আমার স্ত্রী শিক্ষকতা করতেন। মূলত তাঁর আগ্রহেই বাড়িতে একটা ব্যবস্থা করি।নাম দেই আনন্দলোক পাঠশালা। সেখানে প্রাথমিক স্তরের ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ানো হতো। শুধু বিনামূল্যে নয়,ওদের খাতা,কলম,পেন্সিল ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ দেয়া হতো। সাধারণত বিকেলের দিকে ওরা আসতো। এভাবে কখনো ৫০ জন ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এখন যেনো সেখানেও ভাটার টান।সামান্য কয়েক জনই আসে,তাও নিয়মিত নয়।এটাও বড়ো একটা আক্ষেপ রয়েছে।
আজকের লেখা শেষ করবো দুটো ঘটনা দিয়ে।
একে ঠিক আক্ষেপ বলা যাবে না,বরং বলতে হবে অনুশোচনা হয়। ঘটনা দুটো জানাচ্ছি অপরাধবোধ থেকে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন গির্জায় গিয়ে পাদ্রির কাছে দোষ স্বীকার করেন মার্জনা পাওয়ার আশায়। আমিও ঘটনা দুটো জনসমক্ষে প্রকাশ করছি অনুশোচনা ও অপরাধবোধ থেকে, যা আমি দীর্ঘদিন নিজেই বয়ে চলেছি। তেমন কারও সাথেই শেয়ার করা হয়নি।
প্রথম ঘটনা ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে। তখন আমি নওগাঁর সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত। মায়ের মৃত্যু হয়েছে এক মাসও হয়নি। আমার সরকারি বাসভবনে ভাগ্নি ডলির বিয়ের ব্যবস্থা করতে হয়।বিয়ের পরদিন বরযাত্রীরা খেতে বসেছেন। বরযাত্রীদের মধ্যে খেতে বসা একজন লোক সম্পর্কে আমার সন্দেহ হওয়ায় তাকে জিজ্ঞেস করি,তিনি কোথা থেকে এসেছেন। তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন না। আমি তাকে খাবার টেবিল থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলাম।এ ঘটনার জন্য আমি আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না।
দ্বিতীয় ঘটনা ২০১২ সালে ঢাকার। সাধারণত আমি অতিথিবৎসল।প্রায় প্রতিটি কর্মস্থলে আমার বাসায় অনেক লোকজন আসতেন।রংপুর থাকাকালীন বেশি অতিথি এসেছেন। একজন সিনিয়র সহকর্মী মজা করে বলতেন, নারায়ণ কেমন আসছে? তখন আমরা এক চেম্বারে দুজন বসতাম। ওঁর বাড়ি কাছাকাছি দিনাজপুর জেলায় হওয়ায় তাঁরও অনেক মেহমান থাকতো। যা বলছিলাম ঘটনা পরবর্তী সময়ের। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ছাড়া পাড়া প্রতিবেশী কেউ কেউ আসতেন।
এমনই একজন প্রতিবেশী আমার বাসায় এসে এমন একটা কথা বলে, যা তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে উত্তেজিত করে তোলে। আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দেই। এই দুটো ঘটনা এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।অনেক অনুশোচনায় ভুগি।আজ সবাইকে জানিয়ে কিছুটা হাল্কা বোধ করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট

Theme Customized BY LatestNews