সিমলা মানালি ভ্রমণের পর একদিন বিশ্রাম নিয়ে ৮ নভেম্বর মথুরা, বৃন্দাবন ও আগ্রা ভ্রমণে যাওয়ার কথা। সেই তেজবীর কাশ্যপের গাড়ি, এবারের ড্রাইভারের নামও সনু।জিজ্ঞেস করলে
তেজবীর জানায়,তার কাছে সনু নামে আরও ড্রাইভার আছে। আমরা আগের সনুকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এ সনু সত্যিই খুব ভালো ড্রাইভার। অবশ্য সিমলা ভ্রমণের সনুও ড্রাইভার হিসেবে তত খারাপ ছিল না।আর প্রথম দিনের পর কখনো বেয়াদবিও করেনি।
যাহোক ২ দিনে মথুরা,বৃন্দাবন ছাড়াও আগ্রার দর্শনীয় স্থান দেখার পরিকল্পনা। আগ্রা যাবার পথে মথুরা বৃন্দাবন দেখে আগ্রার একটা স্থান দেখে রাতে আগ্রায় অবস্থান।পরদিন তাজমহল সহ অন্যান্য জায়গা দেখে দিল্লি ফেরা।কারণ এরপর দিনই ঢাকা ফেরার টিকিট।
বড় ভাগ্নে আগ্রায় হোটেল বুকিং,গাড়ি ঠিক করে। জামাই মুকুন্দ অনলাইনে তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি ও লালকেল্লা
প্রবেশের টিকিট করে দেয়।নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৮ নভেম্বর ভোর পাঁচটায় দিদির সাথে আমরা দুজন বেরিয়ে যাই। এবারের ড্রাইভার সনু আসলেই খুব আন্তরিক ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দিদিকে মাজি বলা শুরু করে। এরপর শুরু হয় নানাধরণের গল্প।
দিল্লি থেকে বের হয়ে যমুনা এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে গাড়ি চলতে থাকে। এ রাস্তা দিয়ে ২০১৩ সালে আর একবার গিয়েছি। এর আগে ১৯৮৬ সালে মথুরা বৃন্দাবন যাবার সময় এ রাস্তা যারপর নাই খারাপ ছিল। ইদানিং ভারতের রাস্তার দারুণ উন্নতি হয়েছে। ২০১৬ সালে কোলকাতা থেকে সিডান কারে উড়িষ্যা যাবার সময় এমন রাস্তা পেয়েছি। রাস্তায় কিছুদূর পর পর টোল
নেয়া হয়।কোলকাতা থেকে উড়িষ্যা যেতে মোট ৫০০ টাকার মতো টোল দিতে হয়েছিল। টোল নিলেও তা গায়ে লাগে না।কারণ রাস্তায় খুব নিশ্চিন্তে ও আরামে যাওয়া যায়।তিন চার লেনে গাড়ি চলে। অসংখ্য গাড়ি, কিন্তু কোন গাড়িই খুব কাছাকাছি আসে না, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
আমরা রাস্তার পাশের কোন একটা ধাবায় সকালেরখেয়ে নিলাম। বৃন্দাবন পৌঁছাতে সকাল দশটা হয়ে গেল।আগেই বলেছি, আমি আগেও এখানে এসেছি। তবে এবারে সবকিছুই পরিবর্তিত। বৃন্দাবনের আগের সেই কদম গাছ পেলাম না।মথুরায় শ্রীকৃষ্ণেরজন্মস্থান কংশের জেলখানা বন্ধ থাকায়
দেখতে পেলাম না। তবে বৃন্দাবনে দুটি নতুন মন্দির দেখলাম। একটি ইশকন
মন্দির, অন্যটি প্রেম মন্দির।প্রেম মন্দিরের নির্মাণ খুব ভালো।এক হাজার শ্রমিক এগারো বছরে এটি নির্মাণ করেন। ২০০১ সালে শুরু হয়ে ২০১২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মন্দিরের উচ্চতা ১২৫ এবং দৈর্ঘ্য ১২২ ফুট।২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়।এটি ইতালি থেকে আমদানি করা মার্বেল পাথরে তৈরি। দারুণ একটা মন্দির ঘুরে খুব ভালো লাগলো।
ইশকন মন্দির বৃন্দাবন এর আর একটি উল্লেখযোগ্য মন্দির। এর অবস্থান প্রেম মন্দিরের কাছেই। এখানে অনেক কৃষ্ণভক্ত শ্বেতাঙ্গ দেখতে পেলাম, যারা খোল কর্তাল বাজিয়ে কীর্তন করছিলেন। কিছুটা সময় সেখানে কাটিয়ে গেলাম মথুরায়।বৃন্দাবনে আরও কিছু মন্দির ছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে বাঁকু বিহারি মন্দির ও কৃষ্ণ মন্দির যাওয়া হয়নি।
মথুরায় অনেক কড়াকড়ি পেরিয়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান দেখতে গিয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে ফিরে এলাম।কোন কারণে সেদিন কংশের জেল
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ এর জন্মস্থান বন্ধ ছিল। এখানে ভালো লাগলো মন্দির ও মসজিদের পাশাপাশি অবস্থান। একদম লাগালাগি দেয়ালে মন্দির ও
মসজিদ দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর আগ্রার পথে রওয়ানা দিলাম। তখন বেলা দ্বিপ্রহর। একটা হোটেলে খেয়ে রওয়ানা দিলাম ফতেপুর সিক্রির উদ্দেশ্যে।